ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কের বরগুনার আমতলী অংশে ভয়াবহভাবে বেড়েছে সড়ক দুর্ঘটনা। মাত্র ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কে গত দুই বছরে ঘটেছে অর্ধশতাধিক দুর্ঘটনা। এতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২৫ জন। আহত হয়েছেন শতাধিক।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সড়কে বাঁক, যত্রতত্র বাজার এবং থ্রি-হুইলারের দৌরাত্ম্যে রীতিমতো মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে এই মহাসড়ক। তবে পুলিশ বলছে, মহাসড়কে থ্রি হুইলার বন্ধ করতে পারলে দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবে।
মহাসড়কের আমতলীর বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা যায়, যত্রতত্র পার্কিং আর থ্রি হুইলারের চলাচল দেখে মনে হতে পারে এটি অলিগলির কোনো সড়ক। কিন্তু আদৌ তা নয়, এটি ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কের বরগুনার আমতলীর অংশ। পদ্মা সেতু চালুর পর কুয়াকাটাগামী পর্যটকের আনাগোনা বাড়ায় সড়কে বেড়েছে যানবাহন। সে তুলনায় সড়ক প্রশস্ত না হওয়ায় বেড়েছে দুর্ঘটনা। মহাসড়কে চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও আমতলীর উপজেলার চৌরাস্তা থেকে পটুয়াখালী ও কুয়াকাটার উদ্দেশ্য লাইন দিয়ে ছেড়ে যাচ্ছে ব্যাটারিচালিত রিকশা, মাহিন্দ্রা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা।
ইট নিয়ে অনায়াসেই চলছে টমটম আর ট্রাক্টর। দেখলে মনে হবে এগুলো রাস্তায় চলার জন্যই তৈরি করা হয়েছে। সবশেষ মঙ্গলবার (৬ মে) সকালে কুয়াকাটাগামী একটি বাস মোড় ঘুরতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশের পুকুরে পড়ে যায়। তার আগে ১২ ফেব্রুয়ারি বাসের সঙ্গে থ্রি-হুইলার ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হন তিনজন।
সড়ক বিভাগ জানায়, আমতলী অংশের মহাসড়ক দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে পটুয়াখালীর সড়ক বিভাগ। এই সড়ক চার লেনে উন্নীত করার উদ্দেশ্যে জমি অধিগ্রহণ করার জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। তবে এ বিষয়ে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি বরগুনার সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী।
বরিশাল থেকে কুয়াকাটাগামী মিজান নামের একজন বাসচালক বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হচ্ছে রাস্তায় অবৈধ দোকানপাট ও বাজার। যে কারণে রাস্তার ওপরে পথচারী দাঁড়ানো থাকে। এ কারণে ?দুর্ঘটনাও বেশি ঘটছে।’
কুয়াকাটা থেকে ঢাকাগামী শ্যামলী পরিবহনের চালক রফিকুল ইসলাম বলেন, এই রাস্তায় অটোরিকশা অনেক বেশি চলাচল করে। এরা হঠাৎ করেই রাস্তার একপাশ থেকে অন্য পাশে দিক পরিবর্তন করে। এসময় আমাদের গতি বেশি থাকলে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে সমস্যা হয়। অটোরিকশা বাঁচাতে গিয়ে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পারলে রাস্তার ঢালে নামিয়ে দিতে হয়। মহাসড়ক থেকে থ্রি-হুইলার দ্রুত বন্ধ করা উচিত।
আঁকাবাঁকা রাস্তায় সমস্যা বেশি হয় জানিয়ে সোহেল নামের একজন বাসচালক বলেন, ‘মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় অনেক বাঁক রয়েছে। কুয়াশার সময় এই বাঁকগুলো দেখা যায় না। এসব জায়গায় যদি আলোর ব্যবস্থা করা যায় বা চিহ্নিত করার জন্য যে লাইটগুলো বসানো হয় সেগুলো বসালে আমরা অনায়াসেই চিহ্নগুলো দেখে গাড়ি চালাতে পারি।’
মহাসড়কে থ্রি-হুইলারের কারণে দুর্ঘটনা বেশি হচ্ছে জানিয়ে আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুল ইসলাম বলেন, সড়কে অত্যধিক থ্রি-হুইলার। একের পর এক বাঁক ও যত্রতত্র বাজারের কারণে দ্রুতগতির যানবাহনগুলোর গতি কমাতে হয়। অনেক সময় চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে।
এ বিষয়ে বরগুনার পুলিশ সুপার মো. ইব্রাহিম খলিল বলেন, আমরা ট্রাফিক পুলিশের মাধ্যমে আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। তবে গৌরনদী পর্যন্ত হাইওয়ে পুলিশ থাকলেও আমতলী থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত হাইওয়ে পুলিশ নেই। তাই আমাদের কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। তারপরও দুর্ঘটনা রোধে আমরা সাধ্যের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক
আমতলীতে দুই বছরে অর্ধশতাধিক দুর্ঘটনা
- আপলোড সময় : ০৯-০৫-২০২৫ ০৭:৫৯:১৮ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৯-০৫-২০২৫ ০৭:৫৯:১৮ অপরাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ